নিজস্ব প্রতিবেদক: বোরো ধান চাষের মৌসুম শেষে দেরি করে চাষ, সার সংকট এবং রোজা শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বছর খুলনার তরমুজ চাষিরা লোকসান গুনেছিলেন। এবার যেন লোকসান গুনতে না হয় সেজন্য আগেভাগেই তরমুজ চাষে নেমে পড়েছেন তারা।
আসন্ন রমজান মাসে বিক্রি করাই তাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আধুনিক পদ্ধতিতে খুলনার বিলে শুরু হয়েছে তরমুজ চাষ। চলছে জমি তৈরির পাশাপাশি বীজ বপন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার কম জমিতে তরমুজের চাষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কারণ গত বছর যারা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন, এবার তারা ধান চাষের দিকে ঝুঁকছেন। জেলার মোট উৎপাদিত তরমুজের ৭০ শতাংশ দাকোপ উপজেলায় উৎপাদিত হয়। এর পরের স্থান বটিয়াঘাটায়। গত বছর দাকোপ উপজেলায় ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাতিয়ানাংলা এলাকার বিলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার চাষিরা তরমুজ চাষের জন্য জমি তৈরি করে বীজ বপন করেছেন। কেউ কেউ আগাম তরমুজ উৎপাদনের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত চারা দেড় থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা হলে তা জমিতে রোপণ করছেন।
এ বিলের তরমুজ চাষি মো. নুর ইসলাম শেখ বলেন, ‘গত বছর ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু নানা সংকটের কারণে লাভের মুখ দেখতে পারিনি। গত বছর বোরো ধান উঠে যাওয়ার পর তরমুজ চাষ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু নাবী করে লাগানো এই তরমুজের ফলন ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার তরমুজ। এবার সেই ১১ বিঘা জমিতে আগাম তরমুজ চাষ শুরু করেছি। জমি চাষ করে বীজও বপন করেছি। কিছু জমিতে উৎপাদিত চারা লাগিয়েছি। এখন চলছে পানি দেওয়া ও পরিচর্যার কাজ। ১১ বিঘা জমিতে ঠিকমতো তরমুজ হলে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো।’
ওয়ার্ড মেম্বার মো. মোশারফ হোসেন শেখ বলেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। গত বছর লাভ খুব বেশি হয়নি। রমজান মাস শেষ হওয়ার পর অনেক বড় বড় তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে পচে গেছে। গত বছরের কষ্ট লাঘব করতে এবার আগেভাগেই নেমেছি। জমিতে রোপণ করা চারা তিন ইঞ্চি ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন নিয়ম করে পানি দেওয়া হচ্ছে। রমাজান মাসে তরমুজ বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। কাতিয়ানাংলার বিলে ৪৫ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ হচ্ছে।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তার কিছু কারণ ছিল। করোনার সময় বটিয়াঘাটায় মাত্র ৩০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। লাভ বেশি হওয়ায় পরের বছর সেই জমির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে। ফলে সার ও বীজের সংকট দেখা দিয়েছিল। সেই সময় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে সার এনে দেওয়া হয় কৃষকদের। এবার তরমুজের চেয়ে বোরো ধান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যারা গত বছর লোকসান দিয়েছিলেন। তারা আগেভাগে ধান চাষের পরিকল্পনা করছেন। ফলে গত বছরের তুলনায় বটিয়াঘাটায় তরমুজ চাষ কয়েক শত হেক্টর কম হবে। এবার অনেকে এক ফসলি বা পতিত জমিতে তরমুজ আবাদ করবেন। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও অনেক ভালো হবে।’