আব্দুর রউফ ভূঁইয়া: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় সূর্য উঠার সাথে সাথেই ভোরের কুয়াশামাখা। শীত উপেক্ষা না করেই! সন্ধ্যা অবধি বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বোরো চাষের মধ্যেই আগামীর রঙিন স্বপ্ন বুনছেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। কৃষকদের যেন দম ফেলার সময় নেই।নাওয়া-খাওয়া নেই তাদের ঠিকমত।
কৃষকদের মধ্যে কেউ চারা রোপণ করছেন, আবার কেউ জমিতে হালচাষ করছেন। আবার কেউ কেউ বোরো চাষে জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ, গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ, মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ,সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কৃষকেরা।
আমন ধানের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে এবার আগ্রহ বেড়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে চলতি মৌসুমেও ইরি-বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। শেরপুর ইউনিয়নের পাচরকি গ্রামের কৃষক হাদিস,শফিকুল ও এনামুল বলেন, বর্তমানে বোরে ধান লাগাইছি। এখন আমরা খুব ব্যস্ত আছি। অনেক পরিশ্রম করতাছি।
নান্দাইল সদর ইউনিয়নের সাভার গ্রামের কৃষক শাহাজান,বরকত ও আরমান বলেন, শ্রমিকের মজুরি খরচও বেশি। কাজের লোকের অভাবে নিজেরাই ধান লাগাইতাছি। বোরো চাষে অনেক টাকা খরচ হইতাছে।ধান লাগানোর শ্রমিক হামিদুর ,মোফাজ্জল,ছায়িম সহ আরও ককেকজন শ্রমিক বলেন,বোরো ধান লাগাইতাছি। এখন আমরা অবসর নাই। কিন্ত ৫শ থেকে ৬শ টাকা কাঠা বোরো লাগানোতে আমরার পোষায় না। বাজারে এখন সবকিছুর দাম বেশী।
উপজেলা ৩নং সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃরবিউল আলম বলেন,উপজেলায় পুরোদমে বোরো চাষ শুরু হয়েছে।রাত দিন কৃষক মাঠে কাজ করছেন। আমরা আশা করি এইবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলেন, চলতি বছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান ৫৮,ব্রি ধান ৮৮,ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান৯২,বঙ্গবন্ধু ধান- ১০০ এবং হাইব্রিড ছক্কা, হীরা, ঝলক ইত্যাদি জাতের ধান রোপন করা হয়েছে।
বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১ হাজার ২০১হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রিড ১০০ হেক্টর, উফশী ১১০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ১ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। আদর্শ বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১১২ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ অর্জিত হয়েছে। আর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন।