কাজী অলিদ ইসলাম: ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন-যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো শপথ নেন। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রুপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি-সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন তথা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এর অংশ হতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারও সেভাবেই গড়ে তুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে যা করণীয় সবই আমাদের করতে হবে। কারণ আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে জ্ঞান, বিজ্ঞান,শিক্ষা, যোগাযোগ, পরিবহন, শিল্পকারখানা, রোবোটিক সাইন্স, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও গবেষণা ইত্যাদি সব কাজে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ইন্টারনেট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে গড়ে উঠবে একটি ডিজিটিল বিশ্ব। বিশ্বায়নের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্তুত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সেই সোপানের প্রথম ধাপ। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ব্যাপক ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি মানব সক্ষমতা উন্নয়নে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্নে তথা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নাদ্রষ্ট্রা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন আমাদের আরও অনেক দূর পথ এগিয়ে নিতে অগ্রপ্রথিকের ন্যয় সূদৃঢ় ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের সব কয়টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এমনকি সারা বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির তথা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠির এবং দূর্গম/দূরবর্তী পাহাড়ী, আদিবাসী, হিজড়া, হরিজন এবং চা বাগানের শ্রমিকদের ও সকল আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় সকল শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করায় আমাদের একমাত্র অভিষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত। তাই আমাদের দেশকে বিশ্বায়নের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
৭ ডিসেম্বর,২০১০ জাতীয় সংসদে আলোচনান্তে সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহিত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিকে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাসহ মোট ২৮টি অধ্যায় ও ২টি সংযোজনী রয়েছে। এই শিক্ষানীতিকে সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও স্থায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাবসহ বিজ্ঞান শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বৃট্রিশ ও পাকিস্তান আমল এবং কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল শিক্ষানীতি /শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবের ধারাবাহিক প্রতিফলন রয়েছে। শিক্ষানীতি ২০১০ এ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী, গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ, সাধারণ-কারিগরি শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ও প্রশাসন, শিক্ষার স্তরভেদে সুনির্দিষ্ট কৌশল এবং শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে প্রণীত প্রস্তাবনা সমূহের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার স্থাপন, শিক্ষা খাতে সরকারে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-কর্মচারী বৃৃদ্ধি, শেণি কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সজ্জিত করণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষকদের বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদান, শিক্ষার সকল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে স্মার্ট ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের স্বপ্ন সফল হবে বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
লেখক: উপজেলা চেয়ারম্যান