,
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ১০:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নিরপেক্ষ সরকারের শর্তে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না : ওবায়দুল কাদের কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডিবি পুলিশ কর্তৃক ৬ কেজি গাঁজা সহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন শিক্ষকরা : খাদ্যমন্ত্রী টাঙ্গাইলে পান চাষ করে সফল জহিরুল জনসচেতনতা গড়ে তুলতে গণমাধ্যমের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে’ সময়োপযোগি প্রযুক্তিতে আপডেটেড হতে হবে : স্পিকার নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে টেকসই উন্নয়ন নীতি গ্রহণের আহ্বান গাইবান্ধায় গ্রামীন নিউজ২৪ এর ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি পালিত ঘোড়াঘাটে ৮ পতিতা ও খদ্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

শিক্ষা নৈতিকতা অর্জনের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে

সাইফুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক
  • Update Time : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৪৭ Time View

সাইফুল ইসলাম: শিক্ষা মানুষকে বিকশিত করে। গাছ যেমন ডালপালা ছড়িয়ে বড় আকার ধারণ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়, তেমনি শিক্ষা মানুষের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিটি স্তরে সেই মানুষের চিহ্ন থাকে, যার ভেতর শিক্ষা রয়েছে। আর নৈতিকতা এই শিক্ষাকে উঁচু স্তরে নিয়ে যায়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করে। সততা, ন্যায় পরায়ণতা, দৃঢ়তা, আদর্শবাদী মনোভাবে নৈতিকতার স্বরূপ প্রকাশিত হয়। মূল্যবোধ হলো রীতিনীতি ও আদর্শের মাপকাঠি, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। নীতি ভালোমন্দের মধ্যে একটা স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে দেয়। সুতরাং ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে সে সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক কিছুতেই ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ন্যায় আর সত্যের পথ অনুসরণ করে অন্যের ক্ষতি না করে যতটুকু সম্ভব উপকার করা, অপরের কল্যাণ করা প্রত্যেক নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের কাজ। প্রতিটি ধর্মেই তাই নৈতিকতার কথা বলা হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে। মানবজীবনের উন্নয়নে ও মানব কল্যাণের সব বিষয়ের প্রধান নির্ণায়ক হলো নৈতিকতা। আর শিক্ষাই এই নৈতিকতা অর্জনের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। একজন সুশিক্ষিত মানুষ সময়ের প্রয়োজনে যেকোনো পরিস্থিতিতে হাল ধরতে জানেন। ক্যাম্পাস গুলোতে রাজনীতিতে না জড়ানো মেধাবী শিক্ষার্থী এবং সুস্থ ধারার সংস্কৃতিচর্চা করা অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী থাকেন। তাঁদের ভেতর বরঞ্চ পরিচ্ছন্ন চিন্তার নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটে। তাই নেতৃত্বের শূন্যতা হওয়ার প্রশ্ন থাকে না। এসব কারণে আজ সুশিক্ষার প্রশ্নটিই সামনে চলে আসছে সবার আগে। শিক্ষা ব্যবস্থার এমন অবনতি দেখে মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এখানে অনুসরণ করা হচ্ছে না। এবং বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা থেকে আমরা কতটা দূরে সরে গেছি। বঙ্গবন্ধু দেশের শিক্ষাকাঠামোকে অবিমিশ্র রাখতে চেয়েছিলেন। রাজনীতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার প্রবণতা এই মহান মানুষটির জীবনকালে দেখা যায়নি।

বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া জাতির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সরকারের দায়িত্বে এসে দ্রুত কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। দেশের সব স্তরের শিক্ষা উন্নয়ন এই কমিশনের ভাবনায় ছিল। শিক্ষকের মানোন্নয়ন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির অক্টোপাসে আটকে ফেলতে চায়নি এই কমিটি। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিক মানে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ করতে চেয়েছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের দিয়ে। সেখানে তিনি পণ্ডিত শিক্ষকদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক চিন্তার খোঁজ রাখতে চাননি। গুণকেই কদর করতে চেয়েছিলেন। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের আচার্য নিয়োগ দেওয়ারও চিন্তা ছিল। অর্থাৎ তিনি চেয়েছিলেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যাতে শিক্ষাঙ্গনে প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর আমলে শিক্ষক রাজনীতিতে নানা রং পরিচয় শুরু হয়নি। কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনে একটি দূরদর্শিতা ছিল। এখানে প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী করে সমাজ গঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর চিন্তাকে বিলম্বিত করতে চাননি। তাই দেশে ফিরেই শিক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন। এই লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই শিক্ষা কমিশন সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। বঙ্গবন্ধু ছাত্ররাজনীতির ভেতর থেকে বেড়ে উঠেছিলেন। তুখোড় ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ছিল পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগ। অমন বাস্তবতায় ছাত্র নেতাকর্মীরা ছিলেন দেশের জন্য নিবেদিত। লোভ-লালসা আর অন্যায় আচরণের সঙ্গে তাঁদের সংযুক্তি ছিল না। আইয়ুব খান এনএসএফ গঠন করে ছাত্রদের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো সৎ নেতৃত্ব তাঁদের ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। ছাত্ররাজনীতির সেই কমনীয় রূপ ফিকে হয়ে যেতে থাকে স্বাধীনতা-উত্তরকালে। সুন্দরের পথে চালিত করার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিতে থাকেন।

এর পরের সব দলের জাতীয় রাজনীতির বিধায়কদের একমাত্র মোক্ষ হয়ে পড়ে যেভাবেই হোক ক্ষমতার দণ্ড হাতে নেওয়া। এ জন্য জনগণের মনোরঞ্জন করার মতো অতটা ধৈর্য যেন কারো নেই। তাই তাঁরা নানা জায়গায় শক্তির বলয় তৈরি করতে থাকেন। এর মধ্যে বড় শক্তিকেন্দ্র হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু ছাত্রদের আদর্শচ্যুত করেই ক্ষান্ত হননি নেতানেত্রীরা। শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষমতার রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়ে গোটা ক্যাম্পাসের শিক্ষাকাঠামোকেই বিপন্ন করে তোলেন। এ অবস্থায় উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক ছন্দে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারছে না।

কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত। অভাব শুধু গুণগত বা মানসম্মত শিক্ষার। শিক্ষার মান বাড়বে শিক্ষকদের গুণে। শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকের ভূমিকাই সর্বাধিক অগ্রগণ্য। অভিভাবকদের সচেতন করার দায়িত্বও শিক্ষকদের। শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষককে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষক দরদী মন নিয়ে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। শিক্ষককেই সমাজের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ও যথাযথ পাঠদান ও শিক্ষাদানের সক্ষমতা, কৌশল ও নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করবে শিক্ষার গুণগত মান ও মানসম্মত শিক্ষা। যেকোনো দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের নিয়মিত, সুষ্ঠু, উন্নত ও পদ্ধতিগত পাঠদান প্রণিধানযোগ্য। শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত আধুনিক সফল, যথাযথ ও নিয়মিত পাঠদান এবং শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের জন্য বড় প্রাপ্তি আর শিক্ষকদের বড় সন্তুষ্টি, বড় সাফল্য, বড় কৃতিত্ব। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই বর্তমান সমাজের প্রয়োজন মতো চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সমাজের সম্ভাব্য চিত্রকে সামনে রেখে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তথা শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হতে হবে।

উত্তম শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ততাই গড়ে দিতে পারে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত। শিক্ষাকে গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে এগিয়ে চলা সহজ হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর জীবনকে কোনো আদর্শের লক্ষ্যে পরিচালিত করে তার চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে তা প্রতিষ্ঠা করা। সত্য বলা, কথা দিয়ে কথা রাখা, মানুষ ও পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দেশপ্রেম, নৈতিকতাবোধ, দয়া-করুণা, সহমর্মিতা, আত্মত্যাগ, শান্তি, মানবাধিকার, পারস্পরিক অধিকার ও মর্যাদা দেওয়ার মানসিকতা ও অভ্যাস গড়ে তোলা ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণমূলক ও দেশের মানোন্নয়নমূলক মানবীয় গুণাবলি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দেওয়া হয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা। একটি শিশুর প্রাথমিকভাবে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার গুণাবলি তার পরিবারের মাধ্যমেই শুরু হয়। পরিবারের, বিশেষ করে মায়ের কাছ থেকেই সে প্রাপ্ত হয় বিশেষ নৈতিক শিক্ষা। তার পর তাকে শিক্ষা দেয় সামাজিক পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একজন প্রকৃত শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিতভাবে সেই সব শিক্ষা দেন, যা তাকে মূল্যবোধ তৈরি করতে সহায়তা করে। একজন শিক্ষকের একটু উত্সাহ-উদ্দীপনা ও নৈতিক মূল্যবোধের দিক নির্দেশনার ফলে একজন ছাত্রছাত্রী নিজের জীবন গঠন করে শুধু দেশের নয়, সমগ্র মানবতার কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক পড়ানোর সময় নিজেদের মতো করে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারেন।

শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনা না করে নিজেকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ করে গড়ে তোলাই প্রধান মুখ্য বিষয়।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকার কারণে মানবিক সমাজ গড়ার জন্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনশক্তির প্রয়োজন তা আমাদের দেশে হচ্ছে না। আজকাল হতাশা থেকে বিভ্রান্ত হয়ে তরুণরা আত্মহননের মতো জঘন্যতম পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্ত কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দেশের উপযোগী নাগরিক তৈরিতে খুব একটা সক্ষম হচ্ছে না। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, নৈতিকতায় সমৃদ্ধ পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতাসম্পন্ন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে না। এসব ব্যাপারেও মনোযোগ আকর্ষণ প্রয়োজন। শিক্ষার এ অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। এটা মূলত সৃষ্টি হয়েছিল যখন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় অনেক দেশ বরেণ্য শিক্ষক পরামর্শ দিয়েছিলেন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতিকে উৎসাহিত না করা। কিন্তু সে পরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। এখন দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশিশক্তির মহড়া প্রায়ই দেখা যায় ছাত্ররাজনীতির নামে। মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন নাগরিক তৈরির স্বার্থে জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে বিষয়গুলো সন্নিবেশিত থাকার প্রয়োজন ছিল তার অনেকাংশই পাঠ্যক্রমে অনুপস্থিত। এ ছাড়া নৈতিক শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে।যে শিক্ষা আমাদের জীবনধারার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যারা পাস করে বের হন-তাদের বেশির ভাগই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে হতাশায় ভোগেন এবং অনেকসময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অবশ্য সব প্রতিষ্ঠানই যে এমন তা ঠিক নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে মেধাবীরাই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হন। আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম। এখানে মেধা সম্পূর্ণভাবে পরাজিত। এখানে মেধার কোনো গুরুত্ব নেই। রাজনৈতিক প্রভাব, বিশেষ গোষ্ঠীর আনুগত্য এখানে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠে।এভাবে যারা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন, তারা বিভিন্ন অপর্কমের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন।

অথচ শিক্ষা পেশায় উৎসাহী, মেধাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ভবিষ্যৎ জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাবেন; এগিয়ে নিয়ে যাবেন সফলতার অভিযাত্রায়। যারা নিজেরাই স্বপ্ন দেখেন না, দেখার যোগ্যতাই যাদের নেই; তারা কিভাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবেন? অস্ত্রের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট রুম কালচারের বিলুপ্তি ঘটানো প্রয়োজন। নইলে আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী ছাত্ররা অকালেই ঝরে পড়বে, জাতি হারাবে সম্ভাবনার একেকটি নক্ষত্রকে। যারা আজ শিক্ষা ও শৃঙ্খলার আদর্শের পরিবর্তে পেশিশক্তির ভূমিকায় বিশ্বাসী, অনুগত; তারা কর্মজীবনে গিয়ে কখনো আদর্শ এবং নৈতিকতার ধারক এবং বাহক হতে পারবেন না, এ কথা অনস্বীকার্য। আমাদের পাঠ্যক্রম ও শিক্ষার সার্বিক অবস্থা দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়! দেশের বর্তমান জাতীয় প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নয়। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ তো অনেক দূরের কথা। বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত না হয় বাদ দিলাম। আমাদের এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যে শিক্ষা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞানী, দক্ষ ও ভালোমন্দ বোঝার মতো করে গড়ে তোলার পাশাপাশি হৃদয়বান, রুচিশীল, নান্দনিক, নৈতিক ও মানবিক বোধসম্পন্ন, ধার্মিক, দেশপ্রেমিক ও সর্বোপরি আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা জরুরি। প্রযুক্তির আগ্রাসন আর শত কাজের ব্যস্ততায় শিশুর চরিত্র গঠনে বর্তমানে আমরা প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই পালন করেছি। কিন্তু যেসব মা-বাবা সচেতনভাবে এ লক্ষ্যে সন্তানদের সময় দিচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান ও সফল। এ উদ্যোগ একদিকে যেমন তাদের সন্তানদের মধ্যে সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধের জন্ম দিচ্ছে তেমনি এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুস্থ, সৎ ও আত্মনির্ভরশীল নাগরিক সৃষ্টির মাধ্যমে উপকৃত হবে দেশ ও সমাজ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Jonogonerkhobor - জনগণের খবর পোর্টালের প্রয়োজনীয় লিংকসমূহ :

About Us

Contact Us

Privacy Policy

Disclaimer

Terms and Conditions

© All rights reserved © 2022 Jonogoner Khobor - জনগণের খবর
Design & Developed by: Sheikh IT
sheikhit
error: Content is protected !!