ইব্রাহীম প্রামানিক: চলছে শরৎকাল। এ ঋতুর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। এ সময় মেঘমুক্ত আকাশে শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘের খেয়া। চারদিকে সাদা কাশফুলের ওপর ঢেউ খেলে যায় উদাসী হাওয়া। স্বচ্ছ নীল আকাশ আর দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহের মাঝে এ যেন এক প্রকৃতির “স্বর্গরাজ্য”। এ সময়ে বাংলার নীল আকাশের মেঘ আর কাশফুলের কাব্যে রচিত হয় বাংলার ভূ-প্রকৃতি। প্রকৃতির এই বাংলার সবুজ-শ্যামল শরৎ এর আগমন মুগ্ধ করে আমাদের। এজন্যই শরৎকে বলা হয় ‘ঋতুর রানি’।
নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুলগুলো যখন দোল দিচ্ছে বাতাসে, দূরে শোনা যাচ্ছে ট্রেনের হুইসেল! ট্রেন আসছে। দুর্গা আর অপু গ্রামের পথ ধরে দৌড়াচ্ছে। ওরা ট্রেন দেখবে বলে কাশফুল পেরিয়ে পৌঁছাল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে দৃষ্টি থেকে বেরিয়ে গেছে ট্রেনটি। “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্রের এই দৃশ্যকাব্য কার না মনে আছে।
কিংবা কবি নির্মলেন্দু গুন তাঁর কাশফুলের কাব্যে লিখেছিলেন ‘হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়। দেখি ভোরের বাতাসে কাশ দুলছে মাটি ছুঁয়ে। সবাই শুধু থমকে দাঁড়ায় গাঁয়ের পথে চলতে। তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে!’ -এমন কবিতার পংক্তিমালায় কার মন ছুয়ে না যায়? দিশেহারা হয়ে ছুটে যায় মন, কোথায় আছে এমন ধবল সাদা কাশবন?
তাইতো শরতের মেঘহীন নীল আকাশে গুচ্ছ সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয়, প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ও ছুঁয়ে যায় কমল হৃদয়। গ্রামবাংলার পুকুর পাড়ে নদীর কূলে, বিলজুড়ে, খালের পাড়ে কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে বড্ড অবহেলায় ফোটে ওঠে এ কাশফুল। নিতে হয় না কোনো যত্ন-আত্তি। তারপরও দূর থেকে কাশবনে তাকালে মনে হয়, শরৎ এর সাদা মেঘ যেন নেমে এসেছে এ ধরণির বুকে। একটুখানি বাতাস পেয়ে কাশফুলের গুচ্ছ যখন এদিক সেদিক মাথা নাড়ায়, তখন সাহিত্য মনে, কবি নির্মলেন্দু গুনের কাশফুল কাব্যের সেই লাইনটি ভেসে ওঠে,
ইচ্ছে করে ডেকে বলি, “ওগো কাশের মেয়ে―
আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে
তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ
তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস”
কাশফুলের শুভ্রতায় বিমোহিত হয়ে কবিরা শরৎ নিয়ে নিজেদের আবেগকে তুলে ধরেছেন।
শরৎ নিয়ে কাব্য, কবিতা, গান, গল্পের কোনো কমতি নেই। তাই তো সাহিত্যে প্রসঙ্গক্রমে এসেছে শরতের কাশফুল। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য বিমহিত করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নীল আকাশের ধবধবে সাদা মেঘের নিচে মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল যেন চোখ ধাঁধানো এক সৌন্দর্য ছড়ায় তাতে থাকে শুধুই মুগ্ধতা। তবে কালের বিবর্তনে শরতকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর তেমনটি চোখে পরে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনের তাগিদে কাশবন কেটে কৃষি জমি সম্প্রসারণসহ আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে। এতে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য শরতের কাশফুল।
লেখক: মো. ইব্রাহীম প্রামানিক
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি