Hi

ঢাকা, বাংলাদেশ ০৪:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোডম্যাপ ছাড়া দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হবে : বিএনপি

বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সংকটের মুখে, তখন জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের অটল দাবি—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি সুসংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এ রোডম্যাপ ছাড়া দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হবে এবং আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কঠোর প্রশ্ন উঠবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের জনগণ আর অনিশ্চয়তা আর বিলম্ব সহ্য করতে পারে না, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচী ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। ড. মোশাররফ সতর্ক করেছেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডায় প্রয়োজনীয় অগ্রগতি না হয়, তবে বিএনপি সরকারকে সমর্থন দেয়া কঠিন মনে করবে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটি মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সভায় প্রধান বক্তব্য দেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ড. মোশাররফ বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণার অভাবে আমরা গভীর হতাশাগ্রস্ত।” তিনি জানান, ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপির প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। একই দিনে আরও দুটি দলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে। পরবর্তীতে আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, এবং এখনো চায় না। তবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছি।”

ড. মোশাররফ বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে পরিচালিত হতে পারে। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার অব্যাহত থাকবে।”

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় আমরা এসব বিষয় তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের দেওয়া বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।”

ড. মোশাররফ আরও বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু সরকারের অস্বচ্ছতা ও দুর্বলতার কারণে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক দাবি ও সরকারী কর্মকর্তাদের এখতিয়ারবর্হিভূত বক্তব্য দেশের স্বাভাবিক প্রশাসনিক পরিবেশ নষ্ট করেছে, যা সরকারের নিজের সমস্যা।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চাওয়া হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতন ঘটিয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড জনমনে সংশয় সৃষ্টি করেছে।”

ড. মোশাররফ বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়েছে, অথচ সরকার এখনও তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেনি। আমরা আশা করি, দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করেন। ড. মোশাররফ বলেন, “এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত। এর ব্যর্থতা বিএনপির জন্য সরকারের প্রতি সহযোগিতা কঠিন করে তুলবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমরা বৈঠকে ইতিবাচক বার্তা চেয়েছিলাম, কিন্তু তা পাইনি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করা উপযুক্ত নয়, কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান, এসএসসি পরীক্ষা এবং নানা ধরনের দুর্যোগ থাকে।”

ড. মোশাররফ অভিযোগ করেন, “সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

ট্যাগ :

মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ই-মেইল সহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হবে।

About Author Information

© সর্বস্বত স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © Jonogoner Khobor - জনগণের খবর
                                  কারিগরি সহযোগিতায়ঃ মো. সাইফুল ইসলাম                                  

রোডম্যাপ ছাড়া দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হবে : বিএনপি

আপডেট : ১১:৩৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সংকটের মুখে, তখন জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের অটল দাবি—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি সুসংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এ রোডম্যাপ ছাড়া দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হবে এবং আগামী নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কঠোর প্রশ্ন উঠবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের জনগণ আর অনিশ্চয়তা আর বিলম্ব সহ্য করতে পারে না, তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচী ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। ড. মোশাররফ সতর্ক করেছেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডায় প্রয়োজনীয় অগ্রগতি না হয়, তবে বিএনপি সরকারকে সমর্থন দেয়া কঠিন মনে করবে, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটি মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সভায় প্রধান বক্তব্য দেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ড. মোশাররফ বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের ঘোষণার অভাবে আমরা গভীর হতাশাগ্রস্ত।” তিনি জানান, ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপির প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। একই দিনে আরও দুটি দলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে। পরবর্তীতে আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, এবং এখনো চায় না। তবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছি।”

ড. মোশাররফ বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে পরিচালিত হতে পারে। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার অব্যাহত থাকবে।”

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় আমরা এসব বিষয় তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের দেওয়া বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।”

ড. মোশাররফ আরও বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু সরকারের অস্বচ্ছতা ও দুর্বলতার কারণে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক দাবি ও সরকারী কর্মকর্তাদের এখতিয়ারবর্হিভূত বক্তব্য দেশের স্বাভাবিক প্রশাসনিক পরিবেশ নষ্ট করেছে, যা সরকারের নিজের সমস্যা।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চাওয়া হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতন ঘটিয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড জনমনে সংশয় সৃষ্টি করেছে।”

ড. মোশাররফ বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়েছে, অথচ সরকার এখনও তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করেনি। আমরা আশা করি, দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করেন। ড. মোশাররফ বলেন, “এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত। এর ব্যর্থতা বিএনপির জন্য সরকারের প্রতি সহযোগিতা কঠিন করে তুলবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমরা বৈঠকে ইতিবাচক বার্তা চেয়েছিলাম, কিন্তু তা পাইনি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন করা উপযুক্ত নয়, কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান, এসএসসি পরীক্ষা এবং নানা ধরনের দুর্যোগ থাকে।”

ড. মোশাররফ অভিযোগ করেন, “সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে।”

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।