Hi

ঢাকা, বাংলাদেশ ১২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে শুল্কনীতি সংস্কারের পরামর্শ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে শুল্কনীতি পুনর্বিন্যাস, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি এবং কৌশলগত আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) আয়োজনে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ বাণিজ্য পুনর্গঠন” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এ মত দেন।

বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব ও দ্বিপক্ষীয় শুল্ক বৈষম্যের বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচকরা বলেন, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর লবিং ও প্রেক্ষিতভিত্তিক বাণিজ্য কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আমাদের কৌশলগতভাবে ভাবতে হবে এবং শক্তিশালী লবিং গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই সরকারকে দ্রুত একটি বিশেষায়িত বাণিজ্য আলোচনা সংস্থা গঠন করতে হবে।’

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. জাইদি সাত্তার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চীনের পণ্যে গড় শুল্ক ৫৪%, যুক্তরাষ্ট্রে ১০%। এই ট্যারিফ ব্যবধান আমাদের রপ্তানি সক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে রপ্তানিবান্ধব শুল্ক কাঠামোর দিকে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকলেও অন্যান্য খাতে ২৫% পর্যন্ত শুল্ক প্রযোজ্য। কৃষিপণ্য, যন্ত্রপাতি, গাড়ি এবং হালকা প্রকৌশল পণ্যের ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের পক্ষে আনতে হবে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা থাকলেও তা সহজ নয়। আমাদের আলোচনা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। টিকফা প্ল্যাটফর্মে শুল্ক ইস্যু জোরালোভাবে তুলতে হবে।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ–এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর পরিচালক ড. মাহফুজ কবির এবং আইবিএফবির সরকারি সম্পর্ক ও অ্যাডভোকেসি কমিটির সভাপতি এম এস সিদ্দিকী।

বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে টিকফা একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। তবে এখনই বড় পরিসরের চুক্তিতে যাওয়া সম্ভব নয়।’

আইবিএফবির সভাপতি লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। তবে জিএসপি সুবিধা স্থগিত এবং সুরক্ষাবাদী নীতির কারণে চামড়া, হালকা প্রকৌশল ও পোশাক খাতে আমাদের প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে।’

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ৬০ জন প্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেকসই বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তুলতে হলে নীতিগত সংস্কার, বহুমুখী রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ জরুরি।

ট্যাগ :

মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ই-মেইল সহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হবে।

About Author Information

© সর্বস্বত স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © Jonogoner Khobor - জনগণের খবর
                                  কারিগরি সহযোগিতায়ঃ মো. সাইফুল ইসলাম                                  

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে শুল্কনীতি সংস্কারের পরামর্শ

আপডেট : ১১:৫২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে শুল্কনীতি পুনর্বিন্যাস, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি এবং কৌশলগত আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) আয়োজনে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ বাণিজ্য পুনর্গঠন” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এ মত দেন।

বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব ও দ্বিপক্ষীয় শুল্ক বৈষম্যের বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচকরা বলেন, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর লবিং ও প্রেক্ষিতভিত্তিক বাণিজ্য কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আমাদের কৌশলগতভাবে ভাবতে হবে এবং শক্তিশালী লবিং গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই সরকারকে দ্রুত একটি বিশেষায়িত বাণিজ্য আলোচনা সংস্থা গঠন করতে হবে।’

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. জাইদি সাত্তার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চীনের পণ্যে গড় শুল্ক ৫৪%, যুক্তরাষ্ট্রে ১০%। এই ট্যারিফ ব্যবধান আমাদের রপ্তানি সক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে রপ্তানিবান্ধব শুল্ক কাঠামোর দিকে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকলেও অন্যান্য খাতে ২৫% পর্যন্ত শুল্ক প্রযোজ্য। কৃষিপণ্য, যন্ত্রপাতি, গাড়ি এবং হালকা প্রকৌশল পণ্যের ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের পক্ষে আনতে হবে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা থাকলেও তা সহজ নয়। আমাদের আলোচনা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। টিকফা প্ল্যাটফর্মে শুল্ক ইস্যু জোরালোভাবে তুলতে হবে।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ–এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর পরিচালক ড. মাহফুজ কবির এবং আইবিএফবির সরকারি সম্পর্ক ও অ্যাডভোকেসি কমিটির সভাপতি এম এস সিদ্দিকী।

বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে টিকফা একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। তবে এখনই বড় পরিসরের চুক্তিতে যাওয়া সম্ভব নয়।’

আইবিএফবির সভাপতি লুৎফুন্নিসা সৌদিয়া খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। তবে জিএসপি সুবিধা স্থগিত এবং সুরক্ষাবাদী নীতির কারণে চামড়া, হালকা প্রকৌশল ও পোশাক খাতে আমাদের প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে।’

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় ৬০ জন প্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেকসই বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তুলতে হলে নীতিগত সংস্কার, বহুমুখী রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ জরুরি।